
Purulia – A perfect Weekend Destination for Bikers’
পাহাড়ের কোলেই এক মোহময়ী গ্রাম আর সেই গ্রাম সংলগ্ন অপার সৌন্দর্য্য যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস কিংবা উপভোগ দুটিই দুষ্প্রাপ্য। পুরুলিয়া জেলার অন্তর্গত অযোধ্যা পাহাড়ের পরিসরে অবস্থিত এই গ্রামটি পলাশ, শাল এবং মহুল জঙ্গল দ্বারা বেষ্টিত ; ও ভ্রমণকারী , বাইকার অথবা ফটোগ্রাফার দের জন্য সূর্যাস্ত – সূর্যোদয়ের স্বর্গভূমি এই সীতারামপুর গ্রাম।
পুরাণ তত্ত্বের এবং তার ছোঁয়ায় নির্মিতি পুরুলিয়া জেলা, প্রথমে তার সম্পর্কে একটু কথা বলা যাক।
অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সৃষ্ট এই রহস্যময় স্থান পুরুলিয়া; যেখানে একচেটিয়া উপজাতীয় সম্প্রদায়ের লোক সংস্কৃতি তাদের নৃত্য এবং সব কিছুর মধ্যে দিয়ে পৌরাণিক সংযোগের উদ্বোধন!
** সীতারামপুর গ্রামটি কোথায় অবস্থিত?
– পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় ডালমা পর্বতমালার একটি অংশ এবং ওই পাহাড় পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলের মধ্যেই একটি উপজাতীয় গ্রাম আমাদের এই সীতারামপুর। পুরুলিয়া শহর থেকে গ্রামটির দূরত্ব মাত্র ৪১ কিমি। এর নিকটবর্তী সর্বাধিক পরিচিত শহরগুলি হলো অর্শা , হিল টপ ,বাগমুন্ডি, ঝালদা, বেগুনকুদর ইত্যাদি। অযোধ্যা পাহাড়ের শীর্ষ থেকে মাত্র ৮.৯ কিমি এবং মুরগুমা থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরেই এই সীতারামপুর।
** কিভাবে পৌঁছাবো?
– ট্রেনের পথ ধরলে হাওড়া জং থেকে ট্রেন ধরে পুরুলিয়া, তারপর পুরুলিয়া শহর থেকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অথবা প্রাইভেট গাড়ি করে সোজা ক্যাম্পে। আর্শা অথবা সিরকাবাদ এর মাধ্যমেও আসা যায়।
– বাস পথে এলে ওই একই ভাবে ধর্মতলা থেকে পুরুলিয়া এবার পুরুলিয়া থেকে আর্ষা ঝালদা বেগুনকোদর, কমলাবাহাল বা অযোধ্যা হিল টপের বাস ধরতে হয়। দুটোতেই সময় মোট মিলিয়ে ৯-১০ ঘণ্টার কাছাকাছি লাগে।
কিন্তু নিজের বাহনে তারও অনেক টা কম সময়ের মধ্যেই প্রায় ৬-৭ ঘণ্টায় গন্তব্যে ঢুকে পড়া যায়।
** পুরুলিয়া যাবার উপযুক্ত সময়?
– মানুষের মধ্যে ভ্রমণ সংক্রান্ত একটা ধারণার চল রয়েছে। গ্রীষ্মে বরফাচ্ছন্ন পাহাড় কিংবা সামুদ্রিক পরিবেশ বর্ষায় জঙ্গল আর শীতে শুষ্ক মরসুম অথবা লাল পাহাড়ি। কিন্তু তথাকথিত সেই পর্যটনের প্রথাকে ভেঙে মানুষ এখন ব্যতিক্রমী। কারণ প্রত্যেকটি ঋতুতেই যেকোনো জায়গার মাধুর্য্য তার সাথে সাথে পরিবর্তিত।
তাই খাঁটি ভ্রমণ প্রেমীরা সময়কে নির্দ্বিধায় তুচ্ছ করে এক কথায় মনের ডাকে সাড়া দিতে পারে । শুধু মনের দরজায় কড়া নেড়ে তাকে জাগিয়ে রাখা, ব্যাস!
** সীতারামপুর গ্রামের ঐতিহাসিক উৎস ?
-গ্রামবাসীর বিশ্বাসে রাম ও সীতার চরণধূলি পড়ায় সেই থেকেই এই গ্রামের নাম হয় সীতারামপুর।
সীতারামপুর – পুরুলিয়া ভ্রমণের জন্য হাতে কটা দিন রাখা দরকার?
– কলকাতা থেকে খুব কাছেই পুরুলিয়া। ইচ্ছে আর সময়ের মেলবন্ধন হলেই হাতে মাত্র কিছু দিন ছুটি বেঁধে টুক করে একটি উইকেন্ড ট্রিপ যেকোনো সময়ই করে নেওয়া যায় ।
** সীতারামপুর ভ্রমণের জন্য বিস্তারিত ভ্রমণ বৃত্তান্ত?
– আপনি যদি প্রকৃতি, সংস্কৃতি এবং শিল্প ভালোবাসেন তাহলে আপনার জন্য সবথেকে সহজ এবং সেরা সাপ্তাহিক গন্তব্য হলো সীতারামপুর। সক্কাল সক্কাল চেক ইন এর পর প্রথম দিনটা রাখতে হবে গ্রাম্য পরিবেশ এক্সপ্লোর করার জন্য। ওয়েলকাম ড্রিঙ্কসে গলা ভিজিয়ে বেরিয়ে পড়া যায় ঠাকুর চাতান (মেডিটেশন পয়েন্ট), ময়ূর ডাক, লঙ্কা সিধ(সানসেট পয়েন্ট, ঢালাই ট্যার (সুইজারল্যান্ড ভিউ) ঘাগেশ্বরী ফলস ট্রেক আর তার সাথে গ্রামটা। ক্যাম্পে ফিরে শাল পাতার থালায় সাজানো দুরকম ভাজা দিয়ে ভাত, ডাল, আলুপোস্ত পুকুরের টাটকা মাছ আর তাজা স্যালাড পুরো বাঙালিয়ানার স্বাদ। মন ভরে আর পেট পুরে খাবার পর তারা মাচায় সূর্যাস্তের অপেক্ষা। পলাশ গাছের ওপর কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি একটি বসার জায়গা যেটা তারা মাচা এই ক্যাম্পের বিশেষ বিশেষত্ব।
হাওয়ায় মাতানো বিকেল গড়িয়ে গোধূলির আগমনে মনকে বস মানানো কঠিন। সন্ধ্যার ক্যাম্পে মূল আকর্ষণ ক্যাম্পফায়ার আর তার সাথে শালপাতা চিকেন,টিম টিম করে জলা আলো আঁধারির খেলা, এক নতুন জগৎ নতুন সন্ধ্যার উপহার! রাতের মায়াবি পরিবেশে তারামাচায় বসে জমানো মনের কথাগুলো উপড়ে দেওয়া আর কসা মাংস দিয়ে রুটির সাথে সেদিনের রাত্রিযাপন।
দ্বিতীয় দিন – চায়ের কাপে চুমুকের সাথে নতুন আলোর উপভোগ; তারপর ৪ ঘন্টার ঘাগেশ্বরী ট্রেকিং সেরে ক্যাম্পে ফিরে পুরি আর সব্জির সাথে গরম গরম ডিম সেদ্ধ।
** সীতারামপুরের নিকটস্থ গন্তব্য :
সীতারামপুর থেকে সামনাসামনি আরো যে যে টুরিস্ট স্পট গুলো আপনারও কভার করতে পারবেন সেগুলো -আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম, মূরগুমা ড্যাম, তিলাই ঢ্যার ড্যাম, পাখি পাহাড়, খোয়রাবেরা ড্যাম, বামনি ফলস, ময়ূর পাহাড়, তুরগা ড্যাম, লোহরিয়া মন্দির, মার্বেল লেক প্রভৃতি।
** খরচ এবং সুযোগ সুবিধা?
-এরকম একটা অফবিট ও মিউট জায়গা হলেও প্রাথমিক সুবিধা সবটাই পাওয়া যাবে, তবে সেটা জাঁকজমকপূর্ণ না হলেও যথেষ্ট আর সবটাই সাধ্যের মধ্যে। খরচ খুবই কম; ওয়েস্টার্ন ও অ্যাটাচ বাথ রুম যেখানে ২-৩জন, নন অ্যাটাচ বাথ রুম যেখানে ৪-৬ জন আর তার সাথে টেন্টে থাকার ব্যবস্থা, সিঙ্গেল টেন্টে ম্যাক্সিমাম ৪ জন পর্যন্ত থাকা যায় সাথে থাকবে লাইট, পাখা আর চার্জিং পয়েন্ট। টেন্ট এর জন্য ওয়েস্টার্ন কমন বাথের ব্যবস্থা সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা জল। ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস, লাঞ্চ, ইভিনিং স্নাক্স, ডিনার, পরের দিন ব্রেকফাস্ট (সব কটা মিল ননভেজ) সব নিয়ে টেন্ট এর ভাড়া মাথাপিছু ১২০০, অ্যাটাচ বাথ রুমের ভাড়া মাথাপিছু ১৪০০। এর মধ্যে নন ইনক্লুড শালপাতা চিকেন ১ কেজি ৪৫০₹। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার থাকা এবং খাওয়া প্যাকেজ। ২৪ ঘণ্টার ফ্রি পার্কিং ইলেকট্রিসিটি। কেউ ঘাগেস্বরী ফলস ট্রেক করতে চাইলে তার জন্য এক্সট্রা মাথাপিছু ২০০₹।
** সীতারামপুরে কেনো থাকবেন?
– মানুষের মধ্যে ভ্রমণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা আর তার স্বাদের পরিবর্তন হওয়ায় টুরিস্ট স্পট গুলোরও বৈচিত্রতা দেখা দিয়েছে। সেই পরিবর্তনের ওপর নজর দিয়েই এই সীতারামপুর ট্রাভেলার্স ক্যাম্পে কে মনোময় করে তুলেছে। স্পেশালি বাইকার্সদের কথা মাথায় রেখেই ক্যাম্পটিকে বানানো হয়েছে। প্রকৃতির কোলে এই ক্যাম্প, একটা অর্গানিক অনুভূতি। ট্রাভেলার্স এবং বাইকার্স এই দুটো কথার সংমিশ্রণে ক্যাম্পটি একদম যথাযথ। এরকম একটা অফবিট জায়গায় ক্যাম্পে থাকার অভিজ্ঞতা, যেখানে নিজেকে বার বার করে খুঁজে নেওয়া যায় খোলা আকাশের নিচে ; সবুজের বাহারে মনের ডানাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় ; মহুলের সাথে নিজেকে মাতিয়ে নেওয়া আর পাহাড়ের নিস্তব্ধতাকে এতটা আপন করা যার টানে আমি বার বার ফিরে যাবো!
“দূরে গেলে কেন তোলপাড় করিস পাড়া?
ঘরে ফেরা মানে তো তোর কাছেই ফেরা! ”